হনুমান চালিশা কে বাংলা অর্থ | Hanuman Chalisa Meaning in Bengali (Verse-by-verse)

📜
হনুমান চালিসার প্রতিটি শ্লোকের বাঙালি মে বিস্তারিত অর্থ
Hanuman Chalisa Meaning in Bangla (Verse-by-verse)

হনুমান চালিসা তো আমরা প্রায় সকলেই পাঠ করি, কিন্তু আমরা কি এর প্রতিটি শব্দের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শক্তিকে অনুভব করি? এর প্রতিটি চৌপাই এক একটি গভীর রহস্য এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষায় পরিপূর্ণ।

এখানে আমরা প্রতিটি দোহা ও চৌপাইয়ের গভীর অর্থ সরল বাংলা ভাষায় ব্যাখ্যা করেছি, যাতে আপনি বজরংবলীর মহিমাকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করে তাঁর কৃপা লাভ করতে পারেন। আসুন, এই দিব্য জ্ঞানকে বুঝে নিই, যাতে আপনার পাঠ কেবল শব্দের উচ্চারণ হয়েই না থেকে, এক শক্তিশালী ও গভীর প্রার্থনায় পরিণত হয়।

এর অর্থ বুঝে পাঠ করলে, আপনি ভক্তির সাথে জ্ঞান ও শক্তির সংযোগ অনুভব করতে পারবেন এবং Hanuman Chalisa meaning in Bengali আপনার হৃদয়ে গেঁথে যাবে। 🙏🙏🙏

॥ দোহা ॥ (Doha)

শ্রী গুরু চরণ সরোজ রজ, নিজ মন মুকুর সুধারি ।
বরণउँ রঘুবর বিমল জসু, জো দাযক ফল চারি ॥

অর্থ (Meaning):
এই শ্লোকের মাধ্যমে তুলসীদাস তাঁর গুরুর চরণকমলের ধূলিকণাকে নিজের মনরূপী আয়না পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করছেন। এর গভীর অর্থ হলো, জাগতিক মোহ ও অহংকার আমাদের মনের স্বচ্ছতাকে নষ্ট করে দেয়। সেই মনকে শুদ্ধ না করলে ঈশ্বরের (শ্রী রামের) নির্মল মহিমা বোঝা বা বর্ণনা করা সম্ভব নয়।

বুদ্ধিহীন তনু জানিকে, সুমিরৌং পবন কুমার ।
বল বুদ্ধি বিদ্যা দেহু মোহিং, হরহু কলেস বিকার ॥

অর্থ (Meaning):
এখানে ভক্ত নিজেকে ‘বুদ্ধিহীন’ বলে হনুমানজির কাছে আত্মসমর্পণ করছেন, যা বিনয়ের সর্বোচ্চ প্রকাশ। তিনি পবনপুত্র হনুমানের স্মরণ করে প্রার্থনা করছেন, “হে প্রভু, কৃপা করে আমাকে শারীরিক বল, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বুদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান প্রদান করুন।” এই প্রার্থনা জীবনের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট (কলেশ) এবং মানসিক বিকার (ক্রোধ, লোভ) দূর করার জন্য।

॥ চৌপাঈ ॥ (Chaupai) 1-10

জয হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর ।
জয কপীস তিহুং লোক উজাগর ॥1॥

অর্থ (Meaning):
এই চৌপাইয়ের মাধ্যমে হনুমানজির বিশালতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে। তাঁকে কেবল ‘জ্ঞান ও গুণের সাগর’ বলা হয়নি, বরং তাঁর মহিমা যে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল—এই তিন লোককেই আলোকিত করে, তাও বলা হয়েছে। ‘কপীশ’ অর্থাৎ বানরদের রাজা হিসেবে তাঁর জয়গান গেয়ে ভক্ত তাঁর নেতৃত্ব ও শক্তির প্রশংসা করেন, যা অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের পথে নিয়ে যায়।

রামদূত অতুলিত বলধামা ।
অংজনি পুত্র পবনসুত নামা ॥2॥

অর্থ (Meaning):
এই পদে হনুমানজির প্রধান পরিচয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। তিনি কেবল শ্রীরামের দূত নন, তিনি ‘অতুলিত বলধামা’ অর্থাৎ যাঁর শক্তির কোনও তুলনা হয় না। তাঁকে ‘অঞ্জনী-পুত্র’ এবং ‘পবনসুত’ নামে স্মরণ করে তাঁর বংশ এবং দিব্য উৎপত্তির প্রতি সম্মান জানানো হয়। এটি ভক্তকে মনে করিয়ে দেয় যে তাঁর শক্তি ও গতি বাতাসের মতোই অপ্রতিরোধ্য।

মহাবীর বিক্রম বজরংগী ।
কুমতি নিবার সুমতি কে সংগী ॥3॥

অর্থ (Meaning):
এখানে হনুমানজিকে ‘মহাবীর’ এবং ‘বজরংগী’ (বজ্রের মতো শক্তিশালী অঙ্গযুক্ত) বলা হয়েছে, যা তাঁর অসীম সাহস ও শারীরিক শক্তির প্রতীক। তবে তাঁর আসল মাহাত্ম্য হলো ‘কুমতি নিবার’ অর্থাৎ খারাপ বা নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর করা এবং ‘সুমতি কে সংগী’ অর্থাৎ ভালো চিন্তা ও সৎ পথের সঙ্গী হওয়া। এই ভক্তিমূলক স্তোত্রটি পাঠ করলে ভক্তের মন থেকে কুচিন্তা দূর হয়।

কংচন বরণ বিরাজ সুবেসা ।
কানন কুংডল কুংচিত केसा ॥4॥

অর্থ (Meaning):
এই শ্লোকে হনুমানজির সুন্দর এবং দিব্য রূপের বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর দেহের বর্ণ কাঞ্চন বা সোনার মতো উজ্জ্বল এবং তিনি সর্বদা সুন্দর পোশাকে সজ্জিত থাকেন। তাঁর কানে সোনার কুণ্ডল শোভা পায় এবং তাঁর চুলগুলি কোঁকড়ানো ও সুন্দর। এই বর্ণনা ভক্তের মনে হনুমানজির একটি প্রেমময় ও সৌম্য মূর্তি স্থাপন করে, যা ভক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

হাথ বজ্র ঔ ধ্বজা বিরাজৈ ।
কাংথে মূংজ জনেঊ সাজৈ ॥5॥

অর্থ (Meaning):
এই পদে তাঁর দিব্য রূপের বর্ণনা অব্যাহত রয়েছে। তাঁর এক হাতে গদা (বজ্র) এবং অন্য হাতে ধর্মের বিজয় পতাকা (ধ্বজা) শোভা পায়, যা অশুভ শক্তির বিনাশ এবং ধর্মের জয়ের প্রতীক। তাঁর কাঁধে মুঞ্জা ঘাসের তৈরি পৈতা (জনেঊ) রয়েছে, যা তাঁর ব্রহ্মচর্য, পবিত্রতা এবং বৈদিক জ্ঞানে পারদর্শিতার পরিচয় দেয়।

শংকর সুবন কেসরী নন্দন ।
তেজ প্রতাপ মহা জগবন্দন ॥6॥

অর্থ (Meaning):
এখানে হনুমানজিকে স্বয়ং ভগবান শিবের অংশ বা অবতার (‘শংকর সুবন’) এবং ಕೇಸরীর পুত্র (‘কেসরী নন্দন’) বলা হয়েছে। তাঁর তেজ এবং প্রতাপ এতটাই বিশাল যে সমগ্র জগৎ (‘জগ’) তাঁর বন্দনা করে। এই শ্লোকটি তাঁর দিব্য উৎস এবং বিশ্বজনীন পূজনীয়তাকে প্রতিষ্ঠা করে।

বিদ্যাবান গুণী অতি চাতুর ।
রাম কাজ করিবে কো আতুর ॥7॥

অর্থ (Meaning):
এই পদে হনুমানজির শারীরিক শক্তির পাশাপাশি তাঁর জ্ঞান এবং বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করা হয়েছে। তিনি সমস্ত বিদ্যায় পারদর্শী, অনন্ত গুণে গুণান্বিত এবং অত্যন্ত চতুর বা বুদ্ধিমান। কিন্তু তাঁর সমস্ত জ্ঞান ও শক্তির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ‘রাম কাজ’ অর্থাৎ ভগবান শ্রীরামের সেবা করা, যার জন্য তিনি সর্বদা উদগ্রীব থাকেন।

প্রভু চরিত্র সুনিবে কো রসিযা ।
রাম লখন সীতা মন বসিযা ॥8॥

অর্থ (Meaning):
এই শ্লোকটি হনুমানজির ভক্তির গভীরতা প্রকাশ করে। তিনি ভগবান রামের লীলাকথা বা চরিত্র শুনতে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পান (‘রসিয়া’)। তাঁর হৃদয়ে সর্বদা শ্রীরাম, লক্ষ্মণ এবং মাতা সীতা বাস করেন। এটি শেখায় যে, ঈশ্বরের কথা শোনা এবং তাঁকে হৃদয়ে ধারণ করাই হলো ভক্তির সরলতম এবং শ্রেষ্ঠ পথ।

সূক্ষ্ম রূপ ধরি সিযহি দিখাবা ।
বিকট রূপ ধরি লংক জরাবা ॥9॥

অর্থ (Meaning):
এই পদে তাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী রূপ পরিবর্তন করার অলৌকিক ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। অশোকবনে মাতা সীতার কাছে তিনি নিজেকে একটি ক্ষুদ্র ও নম্র রূপ (‘সূক্ষ্ম রূপ’) দেখিয়েছিলেন, যা তাঁর বিনয়ের প্রতীক। কিন্তু সেই তিনিই লঙ্কা দহনের সময় এক ভয়ঙ্কর ও বিশাল (‘বিকট’) রূপ ধারণ করেছিলেন, যা অধর্ম ও শত্রুর প্রতি তাঁর কঠোরতার প্রতীক।

ভীম রূপ ধরি অসুর সংহারে ।
রামচংদ্র কে কাজ সংবারে ॥10॥

অর্থ (Meaning):
এখানে তাঁর আরও একটি শক্তিশালী রূপের বর্ণনা রয়েছে। তিনি বিশালকায় ‘ভীম রূপ’ ধারণ করে রাবণের অসুরদের সংহার করেছিলেন। তাঁর প্রতিটি কাজই ছিল ভগবান রামচন্দ্রের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য নিবেদিত। এটি দেখায় যে তাঁর শক্তি প্রদর্শনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ধর্ম প্রতিষ্ঠা এবং প্রভুর সেবা করা।

॥ চৌপাঈ ॥ (Chaupai) 11-20

লায সংজীবন লখন জিযাযে ।
শ্রী রঘুবীর হরষি উর লাযে ॥11॥

অর্থ (Meaning):
এই শ্লোকটি হনুমানজির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তির বর্ণনা করে। তিনি দুর্গম হিমালয় থেকে সঞ্জীবনী বুটি এনে মৃত্যুপথযাত্রী লক্ষ্মণকে পুনর্জীবিত করেছিলেন। তাঁর এই অসাধ্য সাধনে ভগবান শ্রীরাম (‘রঘুবীর’) এতটাই আনন্দিত হয়েছিলেন যে, তিনি হনুমানজিকে প্রেমভরে আলিঙ্গন করেছিলেন। এটি প্রভুর প্রতি ভক্তের সেবার সর্বোচ্চ পুরস্কারের প্রতীক।

রঘুপতি কীন্হী বহুত বডায়ী ।
তুম মম প্রিয ভরতহি সম ভাই ॥12॥

অর্থ (Meaning):
ভগবান শ্রীরাম (‘রঘুপতি’) হনুমানজির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছিলেন, “তুমি আমার কাছে আমার ভাই ভরতের মতোই প্রিয়।” এটি এক ভক্তের জন্য সবচেয়ে বড় সম্মান, কারণ ভরত ছিলেন ভ্রাতৃপ্রেম এবং ত্যাগের চূড়ান্ত উদাহরণ। এই বাক্যের মাধ্যমে শ্রীরাম হনুমানজিকে দাস বা ভক্তের স্তর থেকে তুলে পরিবারের সদস্যের মর্যাদা দেন।

সহস বদন তুম্হরো জস গাবৈ ।
অস কহি শ্রীপতি কংঠ লগাবৈ ॥13॥

অর্থ (Meaning):
ভগবান রাম আরও বলেন যে, হাজার মুখযুক্ত শেষনাগও তোমার যশের গুণগান করেন। পুরাণে শেষনাগ সর্বদা ভগবান বিষ্ণুর মহিমা গান করেন, তাই তাঁর মুখে হনুমানের প্রশংসা মানে হনুমানের যশ স্বর্গ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই কথা বলে শ্রীরাম তাঁকে পুনরায় আলিঙ্গন (‘কণ্ঠ লগাবৈ’) করেন, যা তাঁদের মধ্যেকার গভীর প্রেম এবং সম্পর্ককে প্রকাশ করে।

সনকাদিক ব্রহ্মাদি মুনীসা ।
নারদ সারদ সহিত অহীসা ॥14॥

অর্থ (Meaning):
সনকের মতো মহান ঋষি, ব্রহ্মা এবং অন্যান্য দেবতারা, নারদ, দেবী সরস্বতী (‘সারদ’) এবং সর্পরাজ শেষনাগ (‘অহীসা’)—সকলেই নিরন্তর আপনার মহিমা ও গুণের গান করেন। এই শ্লোকটি হনুমানজির বিশ্বজনীন সম্মানকে প্রতিষ্ঠা করে। এটি দেখায় যে কেবল মানুষ নয়, বরং সর্বোচ্চ দেবতারা এবং দিব্য সত্তারাও তাঁর গুণগানে সর্বদা রত থাকেন।

জম কুবের দিগপাল জহাং তে ।
কবি কোবিদ কহি সকে কহাং তে ॥15॥

অর্থ (Meaning):
যমরাজ (মৃত্যুর দেবতা), কুবের (সম্পদের দেবতা) এবং সমস্ত দিকের রক্ষাকর্তারাও (‘দিগপাল’) আপনার মহিমার পূর্ণ বর্ণনা করতে অক্ষম। সুতরাং, পৃথিবীর কোনো কবি বা বিদ্বান ব্যক্তি (‘কবি কোবিদ’) কিভাবে আপনার সম্পূর্ণ মহিমা বর্ণনা করতে সক্ষম হবেন? এই পদটি বোঝায় যে হনুমানজির যশ ও কীর্তি মানুষের এবং দেবতাদেরও বর্ণনার ক্ষমতার ঊর্ধ্বে।

তুম উপকার সুগ্রীবহি কীন্হা ।
রাম মিলায রাজপদ দীন্হা ॥16॥

অর্থ (Meaning):
এখানে হনুমানজির সাহায্যকারী এবং মধ্যস্থতাকারী রূপের কথা বলা হয়েছে। তিনি নির্বাসিত সুগ্রীবের উপকার করেছিলেন এবং তাঁকে ভগবান রামের সাথে মিলিয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলেই সুগ্রীব তাঁর হারানো রাজ্য এবং সম্মান (‘রাজপদ’) ফিরে পেয়েছিলেন। এটি শেখায় যে, হনুমানজি সঠিক পথপ্রদর্শক গুরুর মতো ভক্তকে ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত করে দেন।

তুম্হরো মন্ত্র বিভীষণ মানা ।
লংকেশ্বর ভযে সব জগ জানা ॥17॥

অর্থ (Meaning):
আপনার পরামর্শ বা মন্ত্র (‘মন্ত্র’) গ্রহণ করে বিভীষণ লঙ্কার রাজা হয়েছিলেন, একথা সারা বিশ্ব জানে। এটি হনুমানজির রাজনৈতিক জ্ঞান এবং দূরদর্শিতার প্রমাণ। তাঁর পরামর্শ কেবল শক্তি দেয় না, বরং ধর্মের পথে চালিত করে, যার ফলে বিভীষণ অধার্মিক রাবণের পক্ষ ত্যাগ করে ধর্মের পক্ষ নিয়েছিলেন এবং পুরস্কৃত হয়েছিলেন।

যুগ সহস্র যোজন পর ভানূ ।
লীল্যো তাহি মধুর ফল জানূ ॥18॥

অর্থ (Meaning):
এই শ্লোকে হনুমানজির শৈশবের এক অলৌকিক ঘটনার কথা বলা হয়েছে। তিনি হাজার হাজার যোজন দূরে থাকা সূর্যকে (‘ভানু’) একটি মিষ্টি ফল ভেবে মুখে পুরে নিয়েছিলেন। এটি তাঁর জন্মগত দিব্য শক্তি এবং অসীম ক্ষমতার পরিচয় দেয়। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, তিনি কোনও সাধারণ বানর নন, বরং এক ঐশ্বরিক শক্তির অধিকারী।

প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মাহী ।
জলধি লাংঘি গযে অচরজ নাহী ॥19॥

অর্থ (Meaning):
ভগবান রামের দেওয়া আংটি (‘মুদ্রিকা’) মুখে নিয়ে আপনি এক লাফে বিশাল সমুদ্র (‘জলধি’) পার হয়ে গিয়েছিলেন, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কারণ, যাঁর হৃদয়ে স্বয়ং রাম বাস করেন, তাঁর কাছে কোনও কাজই অসম্ভব নয়। এটি শেখায় যে, ঈশ্বরের নাম বা তাঁর প্রতীক সঙ্গে থাকলে জীবনের সবচেয়ে বড় বাধাও সহজে অতিক্রম করা যায়।

দুর্গম কাজ জগত কে জেতে ।
সুগম অনুগ্রহ তুম্হরে তেতে ॥20॥

অর্থ (Meaning):
এই পৃথিবীর সমস্ত কঠিন এবং দুর্গম কাজ আপনার কৃপায় (‘অনুগ্রহ’) সহজ (‘সুগম’) হয়ে যায়। এটি হনুমান চালিসার অন্যতম প্রধান আশীর্বাদ এবং প্রতিশ্রুতি। এই শ্লোকটি পাঠ করলে ভক্তের মনে বিশ্বাস জন্মায় যে, হনুমানজির শরণাপন্ন হলে জীবনের কোনও সমস্যাই আর কঠিন থাকে না।

॥ চৌপাঈ ॥ (Chaupai) 21-30

রাম দুআরে তুম রখবারে ।
হোত ন আজ্ঞা বিনু পৈসারে ॥21॥

অর্থ (Meaning):
আপনিই ভগবান রামের দরবারের দ্বাররক্ষক (‘রখবারে’)। আপনার অনুমতি (‘আজ্ঞা’) ছাড়া সেখানে কেউই প্রবেশ করতে পারে না। এর আধ্যাত্মিক অর্থ হলো, ভগবান রামের কৃপা লাভ করতে হলে প্রথমে তাঁর শ্রেষ্ঠ ভক্ত হনুমানজির কৃপা লাভ করা আবশ্যক। হনুমানজির মাধ্যমেই মোক্ষ বা ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর পথ খুলে যায়।

সব সুখ লহৈ তুম্হারী শরণা ।
তুম রক্ষক কাহূ কো ডর না ॥22॥

অর্থ (Meaning):
যে ব্যক্তি আপনার শরণাগত হয়, সে জগতের সমস্ত সুখ লাভ করে। যখন আপনি স্বয়ং রক্ষাকর্তা, তখন আর কাউকে ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। এই শ্লোকটি ভক্তকে সম্পূর্ণ নির্ভয়তা প্রদান করে এবং বিশ্বাস যোগায় যে, হনুমানজির সুরক্ষা কবচের মধ্যে থাকলে কোনও বিপদ তাঁকে স্পর্শ করতে পারবে না।

আপন তেজ সম্হারো আপৈ ।
তীনোং লোক হাংক তে কাংপৈ ॥23॥

অর্থ (Meaning):
আপনার তেজ বা শক্তি আপনি নিজেই সামলাতে পারেন। আপনার একটি হুঙ্কারেই স্বর্গ, মর্ত্য এবং পাতাল—এই তিন লোক কেঁপে ওঠে। এই পদটি তাঁর অসীম শক্তির পরিচয় দেয়, যা এতটাই বিশাল যে তিনি নিজেই তা নিয়ন্ত্রণ করেন। এটি ভক্তকে তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

ভূত পিশাচ নিকট নহি আবৈ ।
মহবীর জব নাম সুণাবৈ ॥24॥

অর্থ (Meaning):
যখন কোনো ব্যক্তি মহাবীর হনুমানের নাম উচ্চারণ করে বা শোনে, তখন ভূত, প্রেত বা অন্য কোনো অশুভ শক্তি তার কাছে আসতে পারে না। হনুমানজির নামই হলো সবচেয়ে শক্তিশালী রক্ষামন্ত্র। এই শ্লোকটি নেতিবাচক শক্তি এবং ভয় থেকে মুক্তির জন্য পাঠ করা হয়।

নাসৈ রোগ হরে সব পীরা ।
জপত নিরন্তর হনুমত বীরা ॥25॥

অর্থ (Meaning):
যে ব্যক্তি বীর হনুমানের নাম নিরন্তর জপ করে, তার সমস্ত রোগ (‘রোগ’) দূর হয়ে যায় এবং সব রকম শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা (‘পীরা’) শেষ হয়ে যায়। এটি হনুমানজির আরোগ্যকারী শক্তির প্রমাণ। এই দৈনিক পাঠ ভক্তকে শারীরিক সুস্থতা এবং মানসিক শান্তি প্রদান করে।

সংকট তে হনুমান ছুডাবৈ ।
মন ক্রম বচন ধ্যান জো লাবৈ ॥26॥

অর্থ (Meaning):
যে ব্যক্তি মন, কর্ম এবং বাক্যের দ্বারা হনুমানজির ধ্যান করে, হনুমানজি তাকে সমস্ত সংকট থেকে মুক্ত করেন। এর অর্থ হলো, কেবল মুখে নাম নিলেই হবে না, কায়মনোবাক্যে তাঁর প্রতি সমর্পিত হতে হবে। এই ধরনের আন্তরিক ভক্তকে তিনি সমস্ত বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।

সব পর রাম তপস্বী রাজা ।
তিনকে কাজ সকল তুম সাজা ॥27॥

অর্থ (Meaning):
ভগবান রাম হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ তপস্বী এবং রাজাদেরও রাজা, কিন্তু তাঁর সমস্ত কঠিন কাজ আপনিই সম্পন্ন করেছেন। এই শ্লোকের মাধ্যমে হনুমানজির সেবার মহিমাকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখা হয়েছে। এটি দেখায় যে, ঈশ্বরের কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে ভক্ত ঈশ্বরের থেকেও বড় সম্মান লাভ করতে পারেন।

ঔর মনোরথ জো কোয়ি লাবৈ ।
সোই অমিত জীবন ফল পাবৈ ॥28॥

অর্থ (Meaning):
যে কোনও ব্যক্তি আপনার কাছে যা-ই মনস্কামনা নিয়ে আসুক না কেন, সে তার জীবনের সর্বোচ্চ এবং অফুরন্ত ফল লাভ করে। ‘অমিত জীবন ফল’ বলতে কেবল জাগতিক প্রাপ্তি নয়, বরং মোক্ষ বা জীবনের পরমার্থকেও বোঝানো হয়েছে। হনুমানজির কৃপায় ভক্তের সমস্ত বৈধ ইচ্ছা পূরণ হয়।

চারো যুগ প্রতাপ তুম্হারা ।
হৈ পরসিদ্ধ জগত উজিযারা ॥29॥

অর্থ (Meaning):
সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলি—এই চার যুগেই আপনার মহিমা (‘প্রতাপ’) বিদ্যমান। আপনার খ্যাতি সারা বিশ্বে પ્રસਿੱદ્ધ এবং তা জগৎকে আলোকিত করে। এর অর্থ হলো, হনুমানজির শক্তি এবং কৃপা কোনও নির্দিষ্ট সময় বা কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; তিনি চিরন্তন এবং সর্বদা জাগ্রত।

সাধু সন্ত কে তুম রখবারে ।
অসুর নিকন্দন রাম দুলারে ॥30॥

অর্থ (Meaning):
আপনি সাধু-সন্ন্যাসী এবং সৎ ব্যক্তিদের রক্ষাকর্তা (‘রখবারে’)। আপনি অসুরদের বিনাশকারী (‘অসুর নিকন্দন’) এবং ভগবান রামের অত্যন্ত প্রিয় (‘রাম দুলারে’)। এই শ্লোকে তাঁর দুটি প্রধান ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে—সজ্জনের রক্ষা এবং দুর্জন বা অশুভ শক্তির বিনাশ।

॥ চৌপাঈ ॥ (Chaupai) 31-40

অষ্ঠ সিদ্ধি নৌ নিধি কে দাতা ।
অস বর দীন্হ জানকী মাতা ॥31॥

অর্থ (Meaning):
মাতা জানকী অর্থাৎ সীতা আপনাকে এই বরদান দিয়েছেন যে, আপনি যে কাউকে আট প্রকার সিদ্ধি (অণিমা, মহিমা ইত্যাদি) এবং নয় প্রকার নিধি (সম্পদ) প্রদান করতে পারবেন। এই বরদানের ফলে হনুমানজি অলৌকিক শক্তি এবং জাগতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদ দান করার ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন। তাঁর উপাসনা করলে এই সব লাভ করা সম্ভব।

রাম রসাযন তুম্হরে পাসা ।
সদা রহো রঘুপতি কে দাসা ॥32॥

অর্থ (Meaning):
আপনার কাছে রাম নামের অমৃতময় রসায়ন (‘রাম রসায়ন’) রয়েছে, যা সমস্ত রোগ ও দুঃখের মহৌষধ। আপনি সর্বদা রঘুপতি শ্রীরামের দাস হয়ে থাকেন। ‘রাম নামের’ অমৃত পান করার ফলেই তিনি অমর এবং অজেয়।

তুম্হরে ভজন রামকো পাবৈ ।
জনম জনম কে দুখ বিসরাবৈ ॥33॥

অর্থ (Meaning):
আপনার ভজনা বা উপাসনা করলে ভগবান রামকে লাভ করা যায় এবং জন্ম-জন্মান্তরের দুঃখ দূর হয়ে যায়। হনুমানজি হলেন ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর সেতু। তাঁর ভক্তি করলে ভক্ত জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পায় এবং জীবনের পরম শান্তি লাভ করে।

অন্ত কাল রঘুবর পুর জায়ী ।
জহাং জন্ম হরিভক্ত কহাঈ ॥34॥

অর্থ (Meaning):
যে আপনার ভজনা করে, সে জীবনের অন্তিম সময়ে ভগবান রামের ধাম বা বৈকুণ্ঠে (‘রঘুবর পুর’) গমন করে। সেখানে যদি তার পুনর্জন্মও হয়, তবে সে হরিভক্ত রূপেই জন্মায় এবং ঈশ্বরের সেবা করার সুযোগ পায়। এর মাধ্যমে মোক্ষ অথবা ভক্তিমূলক জীবন, দুইই লাভ হয়।

ঔর দেবতা চিত্ত ন ধরঈ ।
হনুমত সেই সর্ব সুখ করঈ ॥35॥

অর্থ (Meaning):
যে ভক্ত অন্য কোনও দেবতার দিকে মন না দিয়ে কেবল হনুমানজির সেবা বা উপাসনা করে, সে-ই জীবনের সর্বপ্রকার সুখ লাভ করে। এর অর্থ এই নয় যে অন্য দেবতাদের অবজ্ঞা করতে হবে, বরং হনুমানজির প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তি রাখলে তিনিই সমস্ত দেবতার আশীর্বাদ এনে দেন।

সংকট কটৈ মিটৈ সব পীরা ।
জো সুমিরৈ হনুমত বল বীরা ॥36॥

অর্থ (Meaning):
যে ব্যক্তি বলশালী বীর হনুমানকে স্মরণ (‘সুমিরৈ’) করে, তার জীবনের সমস্ত সংকট কেটে যায় এবং সব ধরনের पीड़ा বা কষ্ট मिटে যায়। এটি একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতিমূলক শ্লোক, যা ভক্তদের বিশ্বাস যোগায় যে, কেবল নাম স্মরণেই তিনি রক্ষা করতে ছুটে আসেন। সংকটমোচন হিসেবে তাঁর পরিচয় এই শ্লোকে স্পষ্ট।

জৈ জৈ জৈ হনুমান গোসাঈ ।
কৃপা করহু গুরুদেব কী নাঈ ॥37॥

অর্থ (Meaning):
হে গোস্বামী হনুমান, আপনার জয় হোক, জয় হোক, জয় হোক! আপনি আমাদের উপর একজন সদগুরুর মতো কৃপা করুন। এখানে হনুমানজিকে কেবল একজন শক্তিশালী দেবতা হিসেবে নয়, বরং একজন আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবেও বন্দনা করা হয়েছে, যিনি সঠিক পথ দেখিয়ে ভক্তকে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করেন।

জো শত বার পাঠ কর কোঈ ।
ছূটহি বন্দি মহা সুখ হোঈ ॥38॥

অর্থ (Meaning):
যে ব্যক্তি এই হনুমান চালিসা একশ’ বার (‘শত বার’) পাঠ করেন, তিনি সমস্ত জাগতিক বন্ধন থেকে মুক্ত হন এবং পরম সুখ লাভ করেন। ‘একশ’ বার পাঠ’ একটি নিষ্ঠাপূর্ণ সাধনার প্রতীক, যা করলে ভক্ত জীবনের পরম লক্ষ্য মোক্ষ বা মহাসুখ প্রাপ্ত করেন।

জো যহ পডৈ হনুমান চালীসা ।
হোয সিদ্ধি সাখী গৌরীসা ॥39॥

অর্থ (Meaning):
যে ব্যক্তি এই হনুমান চালিসা পাঠ করেন, তিনি সিদ্ধি লাভ করেন অর্থাৎ তাঁর সমস্ত কাজ সফল হয়। স্বয়ং ‘গৌরীশ’ অর্থাৎ ভগবান শিব এর সাক্ষী। ভগবান শিবের সাক্ষ্য এই চালিসার মহিমাকে আরও বাড়িয়ে তোলে এবং এর অলৌকিক ক্ষমতাকে সুনিশ্চিত করে।

তুলসীদাস সদা হরি চেরা ।
কীজৈ নাথ হৃদয মহ ডেরা ॥40॥

অর্থ (Meaning):
শেষ শ্লোকে তুলসীদাস নিজেকে ভগবান হরির (রামের) চিরদিনের দাস (‘চেরা’) বলে সম্বোধন করছেন। তিনি প্রার্থনা করছেন, “হে নাথ (প্রভু হনুমান), আপনি আমার হৃদয়ে সর্বদা বাস করুন (‘ডেরা’)।” এটি একজন ভক্তের চূড়ান্ত প্রার্থনা, যেখানে তিনি ঈশ্বরের সান্নিধ্য ছাড়া আর কিছুই চান না।

॥ দোহা ॥ (Final Doha)

পবন তনয় সংকট হরণ, মঙ্গল মূরতি রূপ।
রাম লখন সীতা সহিত, হৃদয় বসহু সুর ভূপ॥

অর্থ (Meaning):
হে পবনপুত্র, আপনি সমস্ত সংকটের হরণকারী এবং মঙ্গল বা কল্যাণের মূর্ত প্রতীক। আপনি দেবগণের রাজা। আপনি ভগবান রাম, লক্ষ্মণ এবং মাতা সীতার সাথে আমার হৃদয়ে বাস করুন। এই শেষ দোহাটি চালিসার সারসংক্ষেপ, যেখানে ভক্ত হনুমানজিকে সপরিবার শ্রীরামসহ নিজের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠা করার প্রার্থনা জানান।

॥ সিয়াভার রামচন্দ্রের জয় ॥
॥ পবনপুত্র হনুমানের জয় ॥
॥ উমাপতি মহাদেবের জয় ॥
॥ বৃন্দাবন কৃষ্ণচন্দ্রের জয় ॥
॥ বল ভাই সকল সাধুর জয় ॥
॥ শেষ ॥

🙏🙏🙏

🤝
Join Our Devotee Community

Connect with like-minded devotees and make your spiritual journey even more joyful.
🙏🙏🙏

Telegram Channel

Get exclusive insights on the meaning and significance of Hanuman Chalisa 💡

Join free

Facebook Group

Share your experiences on our Facebook page or get inspires by others ✨

Follow now

YouTube Channel

Subscribe us on YouTube for devotional videos and stories ▶️

Subscribe now